ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের নানান ক্ষতি করে থাকে। চিকিৎসকদের ভাষায় মারাত্মক সব রোগের কারণ এসব ব্যাকটেরিয়া। তবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের লক্ষ্যে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল অ্যান্টিবায়োটিক। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম না মেনে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত-অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার থেকে তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী নানা ব্যাকটেরিয়ার।

অর্থাৎ এ জাতীয় ওষুধের কার্যকারিতা কমছে, যা কেড়ে নিচ্ছে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। ব্রিটেনের মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের তথ্য অনুসারে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু থেকে সৃষ্ট নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গুরুতর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচিত অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজে আসেনি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্রধান কিছু অ্যান্টিবায়োটিক এসব ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট সংক্রমণের চিকিৎসায় ১৫ শতাংশেরও কম কার্যকর। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো অ্যাকিনেটোব্যাক্টর বাউমানি নামের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া। এটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীদের ফুসফুসে আক্রমণ করে।

বিষয়গুলো এতটাই উদ্বেগজনক যে ভারতে মাত্র একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর ৪৩ শতাংশকে ২০২১ সালে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া গেছে। অথচ ২০২১ সাল পর্যন্ত আগের ছয় বছরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। কোলকাতার এএমআরআই হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ শাস্বতী সিনহা বিবিসিকে জানান, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সেখানকার আইসিইউতে ১০ জনের মধ্যে ছয় জন রোগীর ওষুধ-প্রতিরোধী সংক্রমণ পাওয়া যায়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট নিরসনে ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় পরীক্ষার ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অন্যথায়, অদূর ভবিষ্যতে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।